রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০২ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

করোনা চিকিৎসায় নিঃস্ব হচ্ছে নিম্নমধ্যবিত্তরা

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

শাহরিয়ার আলমের বোন একটি বেসরকারি হাসপাতালে দুদিন ধরে ভর্তি। করোনা পজেটিভ হওয়ার পর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ শতাংশের নিচে নেমে যাওয়ায় তাকে ভর্তি করা হয়। একদিন পরই তার অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়। তাতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে ‘ক্রিটিক্যাল’ জানিয়ে বলে দেড় লাখ টাকা জমা দিতে হবে। দেড়দিনেই হাসপাতালের বিল আসে ৬০ হাজার টাকা। পরে পরিবারের অনুরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেড ভাড়ায় কিছুটা ছাড় দেওয়ার কথা জানান।

বেসরকারি হাসপাতালে এমন খরচের কথা জেনেই তার পরিবার উদ্যোগী হয় সরকারি কোনও হাসপাতালে একটি বেড খোঁজার।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রুবিনা আলীর স্বামী জানান, একটি টিকিট কেটে তার স্ত্রীকে ভর্তি করিয়েছেন তিনি। টুকটাক কিছু ওষুধ কিনতে হয়েছে শুধু। এ ছাড়া আর খরচ লাগেনি।

তবে হিমসিম খাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালে ছুটে যাওয়া অপেক্ষাকৃত নিম্নবিত্তরা। খরচ কুলাতে না পেরে তারা আবার ছুটছেন সরকারি হাসপাতালে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট করোনার চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে একটি গবেষণা করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সরকারি হাসপাতালে রোগীপ্রতি ব্যয় হচ্ছে প্রায় এক লাখ টাকার বেশি। এই টাকার ১৮ শতাংশ বহন করে রোগী। বাকি টাকা সরকার দেয়।

বেসরকারি চাকরিজীবী মাহফুজ তার স্ত্রীকে একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন। সাতদিনে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। বেশিরভাগই গেছে বাইরে থেকে কেনা ওষুধ ও পরীক্ষা করাতে।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, এ গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কোভিড-১৯ রোগী ব্যবস্থাপনায় আনুমানিক ব্যয় হিসাব করা। বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতালে ব্যয়ের পার্থক্য তুলনা করাও গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।

খরচের পার্থক্য
ওই গবেষণায় জানা যায়, সরকারি হাসপাতালে ওষুধ ও রোগনির্ণয় খাতে খরচ হয় ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ ও ২ দশমিক ৪ শতাংশ। বেসরকারি হাসপাতালে এই হার যথাক্রমে ৩০ ও ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ।

গবেষকরা জানান, বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর গড় অবস্থানকাল সরকারি হাসপাতালের চেয়ে কম। সরকারি হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় একজন রোগী গড়ে চিকিৎসা নেন ১০ দিন। বেসরকারি হাসপাতালে সাড়ে ৬ দিন।

একইভাবে সরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে একজন রোগী গড়ে চিকিৎসা নেন ৮ দিন, বেসরকারি হাসপাতালে গড় অবস্থানকাল ৭ দশমিক ৩৯ দিন। তবে সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী ভর্তি করানোর প্রবণতা বেশি।

বেসরকারি হাসপাতালে দৈনিক খরচও বেশি। কোভিড চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালে প্রতি রোগীর জন্য সাধারণ শয্যায় খরচ গড়ে এক লাখ ২৮ হাজার টাকা; আইসিইউতে চার লাখ আট হাজার টাকা। বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় গড়ে দুই লাখ ৪২ হাজার টাকা এবং আইসিইউতে পাঁচ লাখ নয় হাজার টাকা। বাস্তবে এই খরচ আরও বেশি বলে জানান রোগীরা।

সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খরচের বেশিরভাগটাই সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেয় বলে রোগীর ওপর চাপে পড়ে না। কিন্ত বেসরকারি হাসপাতালের পুরোটাই যায় রোগী ও তার পরিবারের পকেট থেকে।

চিকিৎসকদের মতে, বেসরকারিতে তো বেশিই। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে যে খরচ হয় সেটাও অনেকের পক্ষে মেটানো সম্ভব হয় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, রোগীরা কিছুদিন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর যখন হিমশিম খেতে থাকেন তখন তারা রেফারড হয়ে চলে যান সরকারি হাসপাতালে। এমনটা প্রচুর ঘটছে। অনেকেই রোগীর অবস্থা অনুযায়ী স্থানান্তর করতে রাজি হন না। সেক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয় চালিয়ে যান তারা।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, একজন রোগীর পেছনে গড়ে ছয় থেকে সাত হাজার টাকার ওষুধ-ইনজেকশন প্রয়োজন হয়। পুরোটা সরকার বহন করে।

নতুন ওষুধের খরচে দিশাহারা
করোনার চিকিৎসায় যুক্ত হয়েছে নতুন ওষুধ ও ইনজেকশন। অনেক হাসপাতাল নিজেরা সরবরাহ করলেও অনেককেই তা বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। তাতেও অনেকে হারাচ্ছেন শেষ সঞ্চয়টুকু। দেশে করোনা চিকিৎসার গাইডলাইনে যুক্ত হয়েছে টসিলজুমেব ক্যাটাগরির ইনজেকশন যা বাংলাদেশে দুষ্প্রাপ্য। দেশে এই ওষুধ ‘অ্যাকটেমেরা’ নামে আমদানি করে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস। কিন্তু যে পরিমাণ আমদানি হয় তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

তাই কালোবাজারের যেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অবৈধপথে ভারত থেকে এনে দেশের বাজারে ওষুধটি বিক্রি করে একটি চক্র। কালোবাজারে ইনজেকশনটির দাম লাখ টাকার বেশি। কেউ সুযোগ বুঝে দুই লাখও হাঁকেন।

রেডিয়েন্ট-এর এক কর্মকর্তা জানান, ইনজেকশনটি আমরা কেবল প্রেসক্রিপশন দেখেই সরবরাহ করি। বাইরে কোথাও বিক্রির জন্য দিই না। কেবল কিছু বড় হাসপাতালেই দিচ্ছি।

প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, ইনজেকশনটি ২০০ এমজি ও ৮০ এমজির ভায়ালে বিক্রি হচ্ছে। ৮০ এমজির দাম আট হাজার টাকা এবং ২০০ এমজির দাম ২১ হাজার ৭৫০ টাকা বলে জানান তিনি।

অ্যাকটেমরার কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে একজন আইসিইউ কনসালটেন্ট জানান, কোভিডে যারা মারা যান তাদের সাইটোকাইন স্টর্ম হয়। এটা দূর করতেই অ্যাকটেমরা দেওয়া হয়। এর জন্য টাইমিংটা গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই দিতে হয়। এ ছাড়া এটি প্রয়োগে কোনও লাভ নেই।

অধিকাংশ হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসায় যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, তার একটি হলো রেমডেসিভির। খোলাবাজারে এর ১০০ মিলিগ্রাম ভায়াল বিক্রি হয়। দাম পড়ে সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। পুরো কোর্স সম্পন্ন করতে লাগে ৩০ হাজার টাকার বেশি।

কোভিড আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, তাদের সবারই কম-বেশি নিউমোনিয়ার সমস্যা থাকে। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে রোগীদের দেওয়া হয় অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন। সেটারও প্রতি ডোজ হাজার টাকার কাছাকাছি। এ ছাড়া অক্সিজেন ও অন্যান্য ওষুধের খরচ তো আছেই। সুত্র: বাংলাট্রিবিউন।

ভয়েস/ জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION